Search Bar

পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং শান্তি চুক্তি

(১৭১৫-১৯৯৭)
১। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলে বিচিত্র ভৌগোলিক, সামাজিক ও নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবহমান পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সার্কেল ভিত্তিতে স্থানীয় রাজাদের রাজা শাসিত পার্বত্য অঞ্চল বৃটিশ শাসনের শুরুতে প্রশাসনিকভাবে চট্টগ্রাম জেলারই অংশ ছিল। ১৮৬০-এ হয় পৃথক জেলা পার্বত্য চট্টগ্রাম। স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে ’৮০-র দশকের গোড়ার দিকে গঠিত হয় তিন জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান।




২। পার্বত্য চট্টগ্রাম: আয়তন ৫০৯৩ বর্গমাইল, যা বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১০ শতাংশ। এর বনাঞ্চল দেশের বনভূমির মোট আয়তনের ৪৭ শতাংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামে ১০টি উপজাতীয় গোষ্ঠী রয়েছে-চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, চাক, খিয়াং, খুমি, মুরং, লুসাই, বম এবং পাংখো।



৩। ১৭১৫: চাকমা রাজা জাল্লাল খান মোগল নওয়াবের সঙ্গে চুক্তি করেন।



৪। ১৭১৫-১৭৬০: পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন রাজ্য ছিল এবং সুতা/কার্পাস থেকে মোগল নওয়াবকে রাজস্ব পরিশোধ করা হতো। সেখান থেকে ‘কার্পাস অঞ্চল’ নামটি আসে।



৫। ১৭৬০-১৭৮০: স্বাধীন রাজ্যের মর্যাদা বজায় থাকে, তবে বৃটিশ শাসকদের রাজস্ব প্রদান করতে হতো।



৬। ১৭৭৭-১৭৮০: চাকমা যোদ্ধারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াই করে।



৭। ১৭৮৭: চাকমা রাজা জান বখশ খান ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতি আনুগত্য অঙ্গীকার করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বৃটিশ শাসকদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের আওতায় আসে। বৃটিশরা এলাকাটির প্রশাসনিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার অঙ্গীকার করে।



৮। ১০ই জুন, ১৮৬০: ৩৩০২ নং প্রজ্ঞাপন বলে চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকাকে চট্টগ্রাম জেলা থেকে পৃথক করা হয় এবং ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম’ নামে একটি নতুন জেলার উৎপত্তি হয়।



৯। ১৮৬১: পার্লামেন্টে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল আইন পাস হয়। এই আইনে আইনের এখতিয়ার বহির্ভূত বিষয়ে গভর্নর জেনারেল বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পাসকৃত রেগুলেশনগুলোর স্বীকৃতি দেয়া হয়।



১০। ১৮৭০: গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া আইন পাস হয়। এতে ‘বিশেষ এলাকাসমূহ’-এর সংশিষ্ট আইনে সংশোধনের ক্ষমতা দেয়া হয় গভর্নর জেনারেলকে।



১১। ১৮৮১: পার্বত্য চট্টগ্রাম পুলিশ রেগুলেশন ১৮৮১-এর আওতায় পার্বত্য এলাকার জনগণকে তাদের নিজস্ব স্বাধীন পুলিশ বাহিনী গঠনের অনুমতি দেয়া হয়।



১২। ১লা মে, ১৯০০: পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়াল আইন পাস হয়। সংখ্যালঘু উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর কৃষ্টি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে সাহায্য করার লক্ষে এলাকাটিকে একটি ‘বহির্ভূত এলাকা’ হিসেবে প্রশাসন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চাকমা, বোমাং ও মং সার্কেলে বিভক্ত করা হয়।



১৩। ১৯২০ ও ১৯২৫: উপজাতীয় লোকদের নিরাপত্তা আরও জোরদারের লক্ষে ম্যানুয়াল আইনের সংশোধন করা হয়।



১৪। ১৯৩৫: ইন্ডিয়া রুল আইন পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনের (১৯০০) বৈধতা অনুমোদন করে ও স্বীকৃতি দেয়।



১৫। ১৭ই আগস্ট, ১৯৪৭: র‌্যাডক্লিফ অ্যাওয়ার্ড পার্বত্য চট্টগ্রামকে নতুন পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে অঙ্গীভূত করে।



১৬। ১৫-২০শে আগস্ট, ১৯৪৭: পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতি পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হলে তাদের অধিকার সংরক্ষিত হবে কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে। সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের অফিসে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করে।



১৭। ২১শে আগস্ট, ১৯৪৭: বালুচ রেজিমেন্টের পার্বত্য চট্টগ্রামের আগমন। তারা ভারতীয় পতাকা নামানোর জন্য বিক্ষুদ্ধদের ওপর বল প্রয়োগ করে এবং বালুচ রেজিমেন্ট সেখানে পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করে।



১৮। ১৯৪৮: পার্বত্য চট্টগ্রাম পুলিশ রেগুলেশন-১৮৮১ অপসারণের পর পাকিস্তান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকদের আনুগত্যের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে। নিরাপত্তার ভয়ে কয়েক হাজার উপজাতীয় ভারত ও বার্মায় আশ্রয় নেয়।



১৯। ১৯৫০: পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়াল আইন লঙ্ঘন করে পাকিস্তান সরকার নানাইয়ারচর, লংগদু ও বান্দরবানে কয়েক শ’ মুসলমান পরিবারের বসতি স্থাপন করে।



২০। ১৯৫৬: পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়াল আইন-১৯০০ প্রথম সংবিধানে অনুমোদিত হয়।



২১। ১৯৬২: পাকিস্তান সরকার ওই আইনে ‘পৃথক শাসিত এলাকা’ শব্দগুচ্ছের স্থলে ‘উপজাতীয় এলাকা’ শব্দগুচ্ছ সংযোজন করে আইনটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন করে এবং উপজাতীয় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে শুরু করে।



২২। ১৯৫৭-১৯৬২: কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাঁধ নির্মিত হয়। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৪০ শতাংশ কৃষি ভূমি বাঁধের দখলে চলে যায়। ফলে হাজার হাজার উপজাতীয় লোক তাদের আয়ের উৎস হারায়।



২৩। ১৯৬৪: পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সব লোক কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্পের কারণে জমি হারায় তাদেরকে অন্য পুনর্বাসন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পুনর্বাসন উদ্যোগে অসন্তষ্ট হয়ে অর্ধ লাখ পরিবার লংগদু, বারকোল ও বাঘাইছড়ি পুনর্বাসন এলাকা ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেয়।



২৪। ১৯৭১: বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় (ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়ের পিতা) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করেন।



২৫। ৫ই ডিসেম্বর, ১৯৭১: পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চট্টগ্রামের পানছড়ি এলাকা ছেড়ে যাওয়ার পর অ-উপজাতীয় মুক্তিবাহিনী ১৪ জন উপজাতীয়কে হত্যা করে।



২৬। ২৯শে জানুয়ারি, ১৯৭২: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চাকমা প্রতিনিধিদের আশ্বাস দেন যে, চাকমারা সরকারি চাকরিতে তাদের যথাযোগ্য অংশ পাবে এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানে ১৯৫৬ সালের পাকিস্তান আমলে ঢাকা হাইকোর্টের রায় অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত একটি সাধারণ অঞ্চল হিসেবে কার্যকর করা হয়৷



২৭। ১৫ই ফেব্রুয়ারি ১৯৭২: চাকমা রাজার প্রতিনিধিরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের দাবি সংবলিত চার দফা ইশতেহার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পেশ করেন।



২৮। ২৪শে এপ্রিল, ১৯৭২: চাকমা রাজার পরিষদের সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এই চার দফা ইশতেহার বাংলাদেশ সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন কমিটির কাছে পেশ করেন।



২৯। ২৪শে জুন, ১৯৭২: লারমা আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি আদায়ের লক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সংহতি দল’ নামে একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গঠন করেন।



৩০। ৭ই জানুয়ারি, ১৯৭৩: পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আজ থেকে বাংলাদেশে কোন উপজাতি গোষ্ঠী নেই, প্রত্যেকেই বাঙালি।’ ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে উপজাতীয় জনসংহতি সমিতি সংসদে দুটি আসনে বিজয়ী হয়। উপজাতীয় পক্ষ থেকে লারমা ও চাই থোয়াই রোওজা নির্বাচিত হন।



৩১। আগস্ট, ১৯৭৫: শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে যায়। লারমা আত্মগোপন করেন।



৩২। ১৯৭৬: জিয়াউর রহমানের শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হয় এবং চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের এরিয়া কমান্ডারকে এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়।



৩৩। ২৯শে মে, ১৯৭৭: স্থানীয় সেনাবাহিনীর ওপর শান্তিবাহিনী বড় ধরনের একটি হামলা চালায়। এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীকে এতোটাই শক্তিশালী করা হয় যে, স্থানীয় অধিবাসী ও সেনাবাহিনীর অনুপাত দাঁড়ায় ১:৫।



৩৪। ১৯৭৮: জনসংহতি সমিতির মধ্যে আদর্শগত বিরোধের সূত্রপাত।



৩৫। ১৯৭৯: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর আই চৌধুরীর নেতৃত্ব একটি সার্ভে টিম উপজাতীয়দের সাক্ষাৎকার নেয়। ফলাফলে দেখা যায়, কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্পের ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।



৩৬। ২৫শে মার্চ, ১৯৮০: কলমপতি গণহত্যা: স্থানীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডার একটি বৌদ্ধ মন্দিরে চাকমাদের একটি সভা আহ্বান করে। অভিযোগ রয়েছে সৈন্যরা ওই সমাবেশের ওপর গুলি চালায়। এতে প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়।



৩৭। ২৫শে এপ্রিল, ১৯৮০: সংবাদ সম্মেলনে ৩ সংসদ সদস্য বিলম্বে বাংলাদেশের সংবিধানে চাকমাদের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা, এলাকাটি থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার এবং অ-উপজাতীয়দের পুনর্বাসন বন্ধ করার দাবি জানান।



৩৮। ডিসেম্বর, ১৯৮০: জিয়া সরকার কলমপতি গণহত্যার সামান্য নিন্দা জানিয়ে সমস্যাবিক্ষুদ্ধ অঞ্চল সংক্রান্ত একটি বিল পাস করে।



৩৯। ২৭শে জুলাই, ১৯৮২: জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের পর বিভিন্ন চাকমা নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মান্নাফকে তার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি রাঙ্গামাটি পাঠান।



৪০। ২৪শে অক্টোবর ১৯৮২: জনসংহতি সমিতির বার্ষিক সম্মেলনে পার্টি স্পষ্টভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ও প্রীতি কুমার চাকমা দুই গ্রুপের নেতৃত্ব দেন।



৪১। ১৪ই জানুয়ারি ১৯৮৩ : জনসংহতি সমিতির দুই গ্রুপ প্রথম পরস্পরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।



৪২। ৩রা অক্টোবর, ১৯৮৩ : পার্বত্য চট্টগ্রাম সঙ্কট সমাধানের জন্য জেনারেল এরশাদ কয়েকটি চুক্তির প্রস্তাব দেন।



৪৩। ১০ই নভেম্বর, ১৯৮৩ : ত্রিপুরা রাজ্যের অমরপুর মহকুমা ইজারা গ্রামের কল্যাণপুর ক্যাম্পে প্রীতি গ্রুপে হামলায় মানবেন্দ্র লারমা তার ৮ সহযোগীসহ নিহত হন।



৪৪। ৩১শে ডিসেম্বর, ১৯৮৩ : লারমা গ্রম্নপ জনসংহতি দ্বিধাবিভক্তি ও মানবেন্দ্র লারমা হত্যাকাণ্ডে প্রীতি গ্রুপকে দায়ী করে বিবৃতি দেয়।



৪৫। ২৩শে জানুয়ারি, ১৯৮৪ : প্রীতি গ্রুপ পাল্টা বিবৃতিতে মানবেন্দ্র লারমা হত্যাকাণ্ডের জন্য লারমা গ্রুপকে দায়ী করে।



৪৬। ২৯শে জুন, ১৯৮৫ : সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রীতি গ্রুপের ২৩৩ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করে প্রকাশ্য জীবনে ফিরে আসে। প্রীতি কুমার চাকমা ও ভবতোষ দেওয়ান-গ্রুপের এই দুই নেতা অবশ্য আত্মগোপনে থেকে যান।



৪৭। ২১শে অক্টোবর, ১৯৮৫ : এরশাদ সরকারের আমলে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে জনসংহতি সমিতির প্রথম সংলাপ শুরু হয়। খাগড়াছড়ি জোর পানছড়ি থানার পুঁজগাং এলাকায় এই আনুষ্ঠানিক বৈঠক বসে।



৪৮। ২রা জুন/২৭শে জুলাই, ১৯৮৬ : অ-উপজাতীয় জনগণের ওপর শানিৱবাহিনী বিচ্ছিন্ন দুটি হামলা চালায়। বাঙালি অধিবাসীরা প্রতিশোধ হিসেবে চাকমা এলাকায় লুটতরাজ করে।



৪৯। ১৯৮৬ : পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত হয়।

৫০। ১৯শে সেপ্টেম্বর, ১৯৮৭ : এ অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষে উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ জেনারেল এরশাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং চাকমা সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা চালান।



৫১। ৭ই ডিসেম্বর, ১৯৮৭ : দুই বছর দুই মাস বিরতির পর পানছড়ি থানার পুঁজসাঙে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে জনসংহতি সমিতি দ্বিতীয় বৈঠক বসে।



৫২। ২৪ ও ২৫শে জানুয়ারি ১৯৮৮ : পুঁজগাঙে সেনা কর্মকর্তাও জনসংহতি সমিতির তৃতীয় বৈঠক হয়।



৫৩। ১৭/১৮ই ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ : সেনা কর্মকর্তা ও জনসংহতি সমিতির চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।



৫৪। ১৯শে জুন, ১৯৮৮ : খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে সেনা কর্মকর্তা ও জনসংহতি সমিতির পঞ্চম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।



৫৫। ৮ই আগস্ট, ১৯৮৮ : আদিবাসী সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ওয়ার্কিং গ্রুপ নেদারল্যান্ডে চট্টগ্রাম কমিটি গঠন করে।



৫৬। ১৪ ও ১৫ই ডিসেম্বর ১৯৮৮ : এরশাদ সরকারের আমলে সেনা কর্মকর্তা ও জনসংহতির ষষ্ঠ বা শেষ বৈঠক সমাধান ছাড়াই শেষ হয়।



৫৭। ২৮শে ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯ : তিনটি জেলার সব ক’টিতেই স্থানীয় সরকার সম্পর্কিত একটি বিল সংসদে অনুমোদন করা হয়।



৫৮। ১০ই এপ্রিল, ১৯৯২ : অ-উপজাতীয় ও চাকমা যুবকদের মধ্যে এক দাঙ্গার ফলশ্রুতিতে বসতি স্থাপনকারী এবং আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ লোদাং নামের চাকমা গ্রামে হামলা করে এবং ৩০০ জন প্রাণ হারায়। এই গণহত্যা তদন্তের জন্য খালেদা জিয়ার সরকার একটি কমিটি গঠন করে।



৫৯। ৮ই জুলাই, ১৯৯২ : স্থানীয় সরকারের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য বিএনপি সরকার সংসদে একটি প্রস্তাব পেশ করে।



৬০। ১০ই জুলাই, ১৯৯২ : চাকমা সঙ্কট সমাধানের জন্য যোগাযোগমন্ত্রী অলি আহমেদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।



৬১। ১লা আগস্ট, ১৯৯২ : জনসংহতি সমিতির একতরফাভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে। এ সময় থেকে দফায় দফায় মোট ৩৫ বার অস্ত্র বিরতি মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী অস্ত্রবিরতির মেয়াদ আগামী ৩১শে ডিসেম্বর, ১৯৯৭ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।



৬২। ৭ই অক্টোবর, ১৯৯২ : লোদাং হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি শান্তিবাহিনীকে দায়ী করে প্রতিবেদন পেশ করে।



৬৩। ৫ই নভেম্বর, ১৯৯২ : বিএনপি’র সরকারের আমলে অলি আহমদের কমিটির সঙ্গে জনসংহতি সমিতির প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে শুরু হয়। জনসংহতির পক্ষে জোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বৈঠকে নেতৃত্ব দেন।



৬৪। ১৭ই নভেম্বর, ১৯৯২ : নানিয়ারচর গণহত্যা : উপজাতীয় ছাত্র বিক্ষোভের জবাবে নানিয়ারচর গ্রামে সেনাবাহিনী হামলা চালায়। এতে ৯০ জন উপজাতীয় নিহত হয়। যদিও সরকার এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তবে এই ফলাফল অপ্রকাশিতই থেকে যায়।



৬৫। ২৬শে ডিসেম্বর, ১৯৯২ : সরকার ও জনসংহতি সমিতির দ্বিতীয় বৈঠক খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত হয়।



৬৬। ২২শে মে, ১৯৯৩ : খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে অলি আহমদ ও সন্তু লারমার নেতৃত্বে উভয় পক্ষের তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত।



৬৭। ১৪ই জুলাই, ১৯৯৩ : বিএনপি সরকারের সঙ্গে জনসংহতি সমিতির চতুর্থ বৈঠক খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত হয়।



৬৮। ১৮শে সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩ : খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে সরকার ও জনসংহতি সমিতির পঞ্চম বৈঠক অনুষ্ঠিত।



৬৯। ২৪শে নভেম্বর, ১৯৯৩ : অলি আহমদের কমিটির সঙ্গে জনসংহতি সমিতির ষষ্ঠ বৈঠক খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত।



৭০। ১৫-২২শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪ : বিএনপি সরকারের আমলে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ৩৭৯টি পাহাড়ি পরিবারের ১ হাজার ৮৪১ জন শরণার্থী প্রথম দফায় দেশে ফিরে আসে।



৭১। ৫ই মে, ১৯৯৪ : খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে বিএনপি সরকারের কমিটির সঙ্গে জনসংহতি সমিতির সপ্তম বৈঠক অনুষ্ঠিত।



৭২। ৪ঠা জুন, ১৯৯৪ : সাংসদ রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের কমিটির একটি সাব কমিটি গঠিত। সাব কমিটির সঙ্গে খাগড়াছড়ির পানছড়ি থানার দুদুকছড়িতে জনসংহতি সমিতির বৈঠক হয়।



৭৩। ১০ই জুলাই, ১৯৯৪ : সাব কমিটির সঙ্গে দুদুকছড়িতে জনসংহতি সমিতির দ্বিতীয় বৈঠক।



৭৪। জুলাই, ১৯৯৪ : দ্বিতীয় দফায় ত্রিপুরা থেকে আরও ৬৮৪টি পরিবারের ৩ হাজার ৩৪৫ জন শরণার্থী দেশে প্রত্যাবর্তন।



৭৫। ২৮শে আগস্ট, ১৯৯৪ : দুদুকছড়িতে সাব কমিটি ও জনসংহতি সমিতির তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত।



৭৬। ২৬শে ডিসেম্বর, ১৯৯৪ : মেননের সাবকমিটির সঙ্গে সন্তু লারমার প্রতিনিধিদের চতুর্থ বৈঠক দুদুকছড়িতে অনুষ্ঠিত।



৭৭। ১২ই জুলাই, ১৯৯৫ : দুদুকছড়িতে সাবকমিটি জনসংহতি সমিতির সঙ্গে পঞ্চম বৈঠকে বসে।



৭৮। ২৫শে অক্টোবর, ১৯৯৫ : বিএনপি সরকারের আমলে কোন সমাধান ছাড়াই মেননের সাবকমিটির সঙ্গে জনসংহতি সমিতির ষষ্ঠ ও সরকারের সঙ্গে ত্রয়োদশ বৈঠক শেষ হয়।



৭৯। ২৩শে জুন, ১৯৯৬ : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নির্বাচিত হয়। পার্বত্য জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানের পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্বাচনী এলাকাগুলোয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সংসদে আসন লাভ করে।



৮০। ৩০শে সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ : মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকার জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহকে প্রধান করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করে। কমিটিতে সরকার, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংসদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে বিএনপি’র দুই সাংসদ এই কমিটির কাজে শেষ পর্যন্ত অংশ নেননি। এই কমিটিই পরে জনসংহতি সমিতির সঙ্গে সংলাপের প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।



৮১। ২১ ও ২৪শে ডিসেম্বর : আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত জাতীয় কমিটির সঙ্গে জনসংহতি সমিতির প্রথম বৈঠক খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে ২১শে ডিসেম্বর শুরু হয়।



৮২। ২৫-২৭শে জানুয়ারি, ১৯৯৭ : বিরোধের দুই যুগের মধ্যে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করতে সন্তুর লারমার নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতির নেতাদের প্রথমবারের ঢাকায় আগমন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় উভয়পক্ষের তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।



৮৩। ১২-১৩ই মার্চ, ১৯৯৭ : ঢাকায় সরকার জনসংহতি সমিতির দুই দিনের তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত।



৮৪। ২৮শে মার্চ-৭ই এপ্রিল, ১৯৯৭ : বর্তমান সরকারের আমলে ত্রিপুরায় অবস্থানরত পাহাড়ি শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শুরু হয়।



৮৫। ১১-১৪ই মে ১৯৯৭ : ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সরকার ও জনসংহতি সমিতির চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।



৮৬। ১৪-১৮ই জুলাই, ১৯৯৭ : ঢাকায় সরকার ও জনসংহতির পাঁচদিনের পঞ্চম বৈঠক অনুষ্ঠিত।



৮৭। ১৪-১৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ : ঢকায় সরকারি কমিটি ও জনসংহতি সমিতির চারদিনের ষষ্ঠ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সন্তু লারমা সাংবাদিকদের জানান, তারা খসড়া শান্তিচুক্তি প্রণয়ন করেছেন।



৮৮। ১লা নভেম্বর ১৯৯৭ : পার্বত্য শান্তিচুক্তির খসড়া জনসমক্ষে প্রকাশের দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের আগে তা প্রকাশ করা হলে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।



৮৯। ২১-৩০শে নভেম্বর, ১৯৯৭ : পাহাড়ি শরণার্থীদের ৪র্থ দফায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শুরু। এবারে ১ হাজার ৩৮১ পরিবারের ৭ হাজার ৬২০ জন শরণার্থী দেশে ফিরে আসে। ১লা ডিসেম্বর ১৯৯৭ থেকে পঞ্চম দফায় প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।



৯০। ২৬শে নভেম্বর, ১৯৯৭ : পরবর্তী-ঢাকায় সরকার ও জনসংহতি সমিতির সপ্তম বৈঠক অব্যাহত।



৯১। ৩০শে নভেম্বর, ১৯৯৭ : রাত ১টা ২০ মিনিটে সমাপ্ত বৈঠকে উভয়পক্ষ শান্তিচুক্তির সকল বিষয়ে একমত হয়ে খসড়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

চল্বে

Post a Comment

0 Comments